ছিড়ে ফেলি ভিন্নতার ভেড়াজাল, মুক্ত করি মনুষত্ব্যকে
– এস.এম. আব্দুল আলী এডভোকেট
মানুষ ও মানুষের জীবন একটি নির্দিষ্ট তরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। মৃত্যু অবধি এ তরী থামার নয়।অনেকে অনেক সময় ভূল কিংবা অনিয়মের বশবর্তী হয়ে “জীবনের বিরতি” শব্দটা ব্যবহার করে থাকেন। যা কখনো, কোন অবস্থাতেই গ্রহনযোগ্য নয়। তবে জীবনের স্মৃতি কথাটি চিরন্তন সত্য এবং বাস্তব। তার পরও দেখি না কিছুটা অবাস্তব আর অনিয়মের বশবর্তী হয়ে জীবন যুদ্ধে একটু জিরিয়ে দেখি, না ফেলে আসা সে সব স্মৃতি কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও ফলপ্রসু ছিল। জীবনটাকে দু’ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। একটা স্মৃতি আর অন্যটা সময় বৃত্তিক। আপনি যদি জীবনটাকে স্মৃতি বৃত্তিক সংজ্ঞায়িত করেন, দেখবেন জীবনটা অনেক দীর্ঘ। আর যখন সময়কে প্রাধান্য দিয়ে সংজ্ঞায়িত করবেন, দেখবেন জীবন কত সংক্ষিপ্ত। আমি একথা হলফ করে বলতে পারি, যে এই দীর্ঘ কিংবা সংক্ষিপ্ত জীবনটা সেই মজার মজার স্মৃতিতে পরিপুর্ণ করতে পেরেছে, যে কিনা গ্রামের সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে তার শৈশব অতিবাহিত করেছে। গ্রাম আর শহরের মধ্যে প্রধান পার্থক্যই হল প্রকৃতি। এই ধরুন আমাদের দেশের বিখ্যাত কবি কিংবা লেখকেরা গ্রাম এবং গ্রামের সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশকে তাদের লেখনীতে সিংহভাগ প্রাধান্য দিয়েছেন।আবার অন্যভাবে বিশ্লেষণ করলে এই গ্রাম ছাড়া কিন্তু সাহিত্যের অস্থিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। ধরুন, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি একটি গাণিতিক রাশি। তাহলে দেখবেন, সাহিত্য + সংস্কৃতি = অসীম। কিন্তু এই অসীম মান থেকে যদি আপনি একটা ছোট্ট শব্দ গ্রাম বাদ দেন, তাহলে দেখবেন রাশির মান শূন্যে নেমে এসেছে।
আমি আমার নিজের শৈশব সম্পর্কে এটুকূ গর্ব করে বলতে পারি বেশ মজার ছিল আমার শৈশব। কারণ আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি গ্রামের পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে, গাছে-বাঁশে। আর আমাদের গ্রামের একটা মজার ব্যাপার ছিল সব কিছুতেই ভিন্ন ভিন্ন খেলা যেমন হাডুডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, হাঁড়িভাঙা, যেমন খুশি তেমন সাজ, ভলিবল, দৌড় প্রতিযোগিতা, লম্বা লাফ, উচ্চ লাফ, বেলুন ফোটানো, মেয়েদের রশ্মি লাফ, চেয়ার সিটিং ইত্যাদি । সব কিছু মিলে বেশ হৈ-হুল্লুড় করে শৈশব কাটিয়েছি। সেখানে কোন অপ্রাপ্তি কিংবা অপরিপূর্ণতা ছিল না। কানায় কানায় পরিপূর্ণতা আর অসীম প্রাপ্তির সমন্বয়ে আমার শৈশব। তখন যদিও এসবের তেমন মূল্যবোধ বুঝতাম না। কিন্তু জীবনের এই সময়টাতে এসে পেছনে ফেলে আসা স্মৃতি মনে করতেই অকপটে ভেসে উঠে শৈশবের সময়টা। শৈশবের স্মৃতির কাছে বাকী সবকিছুই নিস্ফল। গ্রামের সবুজ পল্লীতে যিনি শৈশব কাটিয়েছেন সেই ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন, তার অবস্থান যেখানেই হোক সে বারেবারে চাইবে তার গ্রামের সবুজ প্রকৃতিতে ফিরে আসতে। তাইতো বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবিরা তাদের কবিতায় প্রকাশ করেছেন গ্রামের প্রতি তাদের আকর্ষণ-
কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত সুদূর ফ্রান্সে গিয়েও শৈশবের সেই মধুর স্মৃতি মনে করে লিখেছেন-
“সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে!
সতত,তোমার কথা ভাবি এ বিরলে?”
জীবনান্দ দাশ লিখেছেন-
“আবার আসিব ফিরে,
ধানসিড়িটির তীরে,
এই বাংলায়।“
কবি আলমাহমুদের তিতাস কবিতার এই অংশটুকু প্রকাশ করে গ্রামের প্রতি তার মায়া-
জনপদে কী অধীর কোলাহল মায়াবী এ নদী
এনেছে স্রোতের মতো,আমি তার খুঁজিনি কিছুই।
কিছুই খুঁজিনি আমি,যতবার এসেছে এতীরে
নীরব তৃপ্তির জন্য আনমনে বসে থেকে পাড়ে
নির্মল বাতাস টেনে বহুক্ষণ ভরেছি এ বুক।“
গ্রাম যে শুধু সৌন্দর্যে ভরপুর তা কিন্তু নয়। বরং গ্রামের সবকিছুই সুন্দর। গ্রামের প্রতিটি অনুষ্ঠান পালন করার ধরণ সুন্দর। গ্রামে আমাদের প্রতিটি ঋতুকে খুব সুন্দর করে বরণ করা হয়। প্রতিটি ঋতুর জন্য থাকে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের আচার-অনুষ্ঠান। প্রতিটি ঋতু আপন মহিমায় ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যের উৎস নিয়ে হাজির হয় গ্রামে। গ্রীষ্মকালে নানা ধরণের ফলের বাহার, শীতকালের টাটকা শাক সবজি, বর্ষাকালের বিভিন্ন জাতের মাছ ধরার হিড়িক, শরতের শুভ্র কাশফুল প্রতি দিন হয়ে উঠে উৎসব পার্বণময়। গ্রামে হয়তো শহরের মতো ততোটা সুযোগ-সুবিধা নেই, কিন্তু রয়েছে অপুরূপ শান্তি এবং প্রকৃতির সমারোহ। সবুজের ছায়া ঘেরা গ্রামের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আমাদের। গ্রামের বিশাল বির্স্তীর্ণ মাঠ সেই সাথে বেয়ে চলা আঁকাবাঁকা নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি জানান দেয় প্রকৃতি বয়ে চলে তার নির্দিষ্ট নিয়মে এবং নির্দিষ্ট গতিতে। গ্রামের সৌন্দর্য কখনো শহরের ইটঁকাঠে পাওয়া যায় না। তাইতো শহরের মানুষ খানিকটা অবসরে নাড়ির টানে ছুটে আসে তার গ্রামে। আমাদের ব্যাক্তগত কিংবা জাতীয় জীবনে গ্রামের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এই গ্রামের প্রাকৃতিক কোন অংশের পরিবর্তন যুক্তিযুক্ত নয়। তাই আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এবং আমদের স্ব স্ব অবস্থান হতে গ্রামের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই।
পরিশেষে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আমাদের গ্রাম তথা নন্দিরগাঁও রাজের সকল প্রয়াত মুরব্বীয়ানদের প্রতি যাদের নাম স্মরণ না করলে একান্তই হয় না তারা হলেন সর্ব মরহুম শ্রদ্ধেয় আমার দাদা শেখ হাছন আলী মুন্সি, আমার জন্ম দাতা পিতা শেখ মোঃ আব্দুল মনাফ, আমার নানা মোঃ লিলমন মিয়া, মোঃ মনছব আলী, মোঃ তছির মিয়া, মোঃ আব্দুল আলী হাজী, মোঃ সোনা মিয়া হাজী, মোঃ আব্দুল মুতলিব মুরব্বী, মোঃ মশাহিদ আলী মেম্বার, মোঃ মহিবুর রহমান মেম্বার, মোঃ আব্দুছ ছালাম মেম্বার, মোঃ ইয়াকুব আলী মেম্বার সহ সকলকে। আমি আরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আমাদের গ্রামদ্বয়ের বিশিষ্ট আলেমে মাশায়েখ সর্ব মরহুম শ্রদ্ধেয় মাওলানা মোঃ আব্বাস আলী মুন্সি, মাওলানা মোঃ হাবিবুর রহমান, মাওলানা মোঃ আব্দুল হালিম, মাওলানা মোঃ আব্দুছ সাত্তার, মাওলানা মোঃ হারুনুর রশিদ প্রমুখ, যাদের আত্মার মাগফেরাত ও জন্নাতের উচ্চ মাকাম কামনা করছি। পাশাপাশি আমাদের গ্রামদ্বয়ের সকল গুণীজন যাদের মধ্যে সর্ব জনাব শ্রদ্ধেয় বড়ভাই শেখ মোঃ আব্দুল খালিক, মোঃ বশির আহমদ, মোঃ হাজির আলী, ডাঃ মুজিবুর রহমান, মোঃ হারুনুর রশিদ মেম্বার, ডাঃ মোঃ উমর আলী, মাওলানা মোঃ ইব্রাহিম আলী, মোঃ মদরিছ আলী শিকদার মেম্বার, মাস্টার বদরুল ইসলাম, মাস্টার মোঃ ইলিয়াস আলী(বর্তমানে সার্ভে অধিদপ্তরে কর্মরত), এসোসিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান, মাস্টার মোঃ আলা উদ্দিন, মাওলানা মোঃ শাব্বির আহমদ, আমেরিকা প্রবাসী মাওলানা মোঃ রশীদ আহমদ, মোঃ খোয়াজ আলী মেম্বার, যুবলীগ নেতা মোঃ নজরুল ইসলাম, মাস্টার মোঃ বাবুল আহমদ, সাবেক মেম্বার বর্তমান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল ওয়াহিদ সহ আরও অনেককে (লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাবে বলে সকলের নাম প্রকাশ করতে না পারায় আন্তরিক ভাবে দুঃখিত) যাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। তাছাড়াও আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাগুরু সর্ব জনাব শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুর রহমান (অবসরপ্রাপ্ত), সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুন নূর (অবসরপ্রাপ্ত), সাবেক সহকারী শিক্ষক মোঃ নূরুল আলম (বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং তিনি সম্পর্কে আমার ফুফা শ্বশুড় হন) তাদের সহ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষা জীবনের ও কর্মক্ষেত্রের সকল পর্যায়ের শিক্ষকবৃন্দের প্রতি নিরন্তর শ্রদ্ধা-ভক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
লেখক:
এস.এম. আব্দুল আলী এডভোকেট
জজকোর্ট, সিলেট।
আইন উপদেষ্টা:
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ
পূবালী ব্যাংক লিঃ
মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিঃ
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিঃ
আইন বিষয়ক সম্পাদক:
জৈন্তিয়া কেন্দ্রীয় পরিষদ
সাধারণ সম্পাদক:
নন্দিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ
উপদেষ্টা:
প্রত্যাশা যুব সংঘ, নন্দিরগাঁও-মানাউরা